ঢাকা , শুক্রবার, ২৩ মে ২০২৫ , ৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

​শার্শায় প্রতিদিন ৭ কোটি টাকার আম বেচাকেনা হচ্ছে

স্টাফ রিপোর্টার
আপলোড সময় : ২৩-০৫-২০২৫ ০৪:০৪:৪৩ অপরাহ্ন
আপডেট সময় : ২৩-০৫-২০২৫ ০৪:০৪:৪৩ অপরাহ্ন
​শার্শায় প্রতিদিন ৭ কোটি টাকার আম বেচাকেনা হচ্ছে সংবাদচিত্র: সংগৃহীত
যেদিকে চোখ যায় শুধু আম আর আম। প্রতিটি আড়তে আমের পসরা সাজিয়ে বসেছেন দোকানিরা। কেউ কিনছেন, কেউ বিক্রি করছেন আবার কেউবা বাজার যাচাই করছেন। এ চিত্র যশোরের শার্শা উপজেলার বাগুড়ি বেলতলা আম বাজারের। প্রতিদিন এ বাজার থেকে ৭ কোটি টাকার আম কেনাবেচা হয়। পাশাপাশি দেশের সিংহভাগ জেলার চাহিদা মিটিয়ে এ বাজার থেকে আম বিদেশেও রপ্তানি করা হয় বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

সরেজমিনে দেখা গেছে, সাতক্ষীরা-নাভারণ আঞ্চলিক মহাসড়কের দুই পাশে বসে বৃহৎ এ আমের বাজার। বাজারে রয়েছে ৮৬টি আমের আড়ৎ। উপজেলার ১১ ইউনিয়নসহ আশপাশের এলাকা থেকে চাষিরা এ বাজারে আম নিয়ে আসেন। সকাল থেকে পাইকাররা ছুটে আসেন এখানে। ক্রেতা ও বিক্রেতাদের হাঁকডাকে মুখর হয়ে ওঠে পুরো বাজার।সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, বাজারে তিন ধরনের আড়ৎ রয়েছে। ‘এ’ গ্রেড, ‘বি’ গ্রেড ও ‘সি’ গ্রেড। ‘এ’ গ্রেডের একজন আড়তদার প্রতিদিন গড়ে ১০ থেকে ১৫ লাখ, ‘বি’ গ্রেডের একজন আড়তদার প্রতিদিন ৬ থেকে ১০ লাখ এবং ‘সি’ গ্রেডের একজন আড়তদার প্রতিদিন ৩ থেকে ৪ লাখ টাকার আম বিক্রি করে থাকেন।ঢাকা ফল ভান্ডারের ইসাহক আলী বলেন, গোপালভোগ, ক্ষীরশাপাতি, গোবিন্দভোগ, ল্যাংড়া, হিমসাগর, গোপাল খাস, বৈশাখী, আম্রপালিসহ নানা জাতের আম বাজারে উঠে। ফরমালিনমুক্ত হওয়ায় চাহিদাও বেশি। 

ঢাকা থেকে আম কিনতে আসা জব্বার শেখ বলেন, প্রতিদিন আমরা ৫-৭ টন আম বেলতলা বাজার থেকে ক্রয় করি। চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে আসা ক্রেতা ফারুক হোসেন বলেন, এ অঞ্চলের আম একটু আগে পাকে। এখান থেকে আম নিয়ে বাজারজাত করলে ভালো লাভ পাওয়া যায়। তবে নিরাশার কথাও জানালেন ক্রেতা-বিক্রেতারা। তারা বলেন, ব্যস্ততম সড়কে নানা ধরনের পরিবহন চলাচল করে। বাজারটি রাস্তার ওপর হওয়ায় প্রতিনিয়ত ছোটখাটো দুর্ঘটনা ঘটে। তাদের দাবি, বাজারটি যদি কোনো একটি মাঠে বসানো যেতো তাহলে নিরাপদে চাষিরা আম বিক্রি করতে পারতেন। সেই সঙ্গে ব্যবসায়ীরাও ধীরে আম গুছিয়ে কার্টনে করে পরিবহন করতে পারতেন। রাস্তার ওপর প্রতিদিন শত শত ভ্যান, করিমন-নসিমনসহ নানা ধরনের ইঞ্জিনচালিত পরিবহন দাঁড় করিয়ে আম নামাতে হয়। তাতে যানজটেরও সৃষ্টি হয়।

একাধিক ব্যবসায়ী জানান, বাজারটি যদি কোনো একটি মাঠে বসানো যেত তাহলে নিরাপদে চাষিরা আম বিক্রি করতে পারতেন। সেই সঙ্গে ব্যবসায়ীরাও ধীরে আম গুছিয়ে কার্টনে করে পরিবহন করতে পারতেন।জানতে চাইলে বাসচালক মফিজুল ইসলাম ও ট্রাকচালক মো. ওয়াসকুরুনি বলেন, বাজারটি খোলাস্থানে হলে ভালো হতো। মহাসড়ক ঘিরে বাজারের কারণে যানজট লেগেই থাকে। ফলে আমাদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। বাজার ব্যবস্থাপনা কমিটির প্রচার সম্পাদক মন্টু মিয়া বলেন, কোনো ধরনের চাপ ছাড়া ব্যবসায়ীরা এখানে ব্যবসা করছে। আড়ৎদাররা শতকরা ৩ টাকা কমিশনে আম বিক্রি করে থাকেন। বাজারের চাষিরা আম বিক্রি করে নগদ টাকা নিয়ে ঘরে ফেরেন। চাষিদের এখানে শতকরা ৫ টাকা খাজনা দিতে হয়।

কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো. কামরুজ্জামান বলেন, যাতায়াত ব্যবস্থা ভালো থাকায় বাগুড়ি বেলতলা বাজারে দেশে ৬৪ জেলা থেকেই পাইকাররা আম কিনতে আসেন। স্থানীয় চাষিরা এখানে আম বিক্রি করেন। এ বাজারের আম ফরমালিনমুক্ত বলে বিশেষ খ্যাতি রয়েছে। গাছপাকা আমও এ বাজারে পাওয়া যায়। সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে আম কিনে ব্যবসায়ীরা লাভবান হচ্ছেন। বাজার কমিটির সভাপতি মাহমুদ হোসেন বলেন, এই বাজার শুধু আম বেচাকেনার স্থান নয়। এটি স্থানীয় আমচাষিদের পরিশ্রম, অপেক্ষা আর স্বপ্নের প্রতিফলন। বহু কৃষকের সারাবছরের যত্নে গড়া ফল এখন পৌঁছে দিচ্ছেন দেশের বিভিন্ন প্রান্তে।শার্শা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ডাক্তার কাজী নাজিব হাসান বলেন, বেলতলা বাজার দেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের একটি বড় আম বাজার। অসাদু ব্যবসায়ীরা যেন আমে ফরমালিন মেশাতে না পারে সেজন্য নিয়মিত বাজার মনিটরিং করা হয়। পাশাপাশি আম সংগ্রহের তারিখও নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে।

বাংলাস্কুপ/প্রতিনিধি/এনআইএন



প্রিন্ট করুন
কমেন্ট বক্স


এ জাতীয় আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ